চিকিৎসকের নামে ছায়ার খেলা,মাদকের মহড়ায় পুলিশের জয়, তবু দুঃসাহসের দাপট

চিকিৎসকের নামে ছায়ার খেলা,মাদকের মহড়ায় পুলিশের জয়, তবু দুঃসাহসের দাপট

কৌশিক মুখার্জী: দূর্গাপুর:-

রাতের অন্ধকারে, মানকর রোডের নিঝুম পথে একটি চকচকে গাড়ি ছুটে চলছিল। দরজায় চিকিৎসকের নামাঙ্কিত স্টিকার, যেন সমাজের ভরসার প্রতীক। কিন্তু এই ভরসার আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক বিষাক্ত গোপনীয়তা—প্রায় ৩০ কেজি গাঁজা, উড়িষ্যার গভীর অন্ধকার থেকে মুর্শিদাবাদের পথে পাচারের উদ্দেশ্যে। গত ৬ জুলাই রাতে বুদবুদ পুলিশের তীক্ষ্ণ নজর এই ছদ্মবেশের জাল ছিন্ন করে। গাড়ি থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়—কামাল উদ্দিন শেখ, গাড়ির চালক; হাবিবুল শেখ, গাড়ির মালিক; এবং বাবু শেখ, একজন ব্যবসায়ী। তিনজনই মুর্শিদাবাদের সালার শেখ পাড়ার বাসিন্দা। আজ, ৭ জুলাই, দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তাদের হাজির করা হয়েছে, এবং পুলিশ দশ দিনের হেফাজতের আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু এই গ্রেপ্তারের গল্প শুধু অপরাধের উন্মোচন নয়, এটি সমাজের সামনে একটি অস্বস্তিকর আয়না ধরে।গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, আউসগ্রামের পথে মানকর রোড দিয়ে একটি গাড়ি মাদক নিয়ে যাচ্ছে। মানকর কলেজের কাছে জাল পেতে গাড়িটি আটক করা হয়। তিন আরোহীর কথাবার্তায় অসঙ্গতি ধরা পড়তেই তল্লাশি শুরু। আর তখনই বেরিয়ে পড়ে গাড়ির গোপন কুঠুরি থেকে বিশাল গাঁজার চালান। পুলিশের এই দ্রুততা এবং গোয়েন্দা কার্যকলাপ একটি অবৈধ কারবারকে থামিয়েছে, যা প্রশংসার দাবিদার। তবে এই সাফল্যের পাশে একটি তিক্ত প্রশ্ন জেগে ওঠে—এই অপরাধীরা এত নির্ভীকভাবে এমন কাণ্ড ঘটানোর সাহস কোথায় পায়?চিকিৎসকের নামাঙ্কিত স্টিকারের আড়ালে মাদক পাচারের এই দুঃসাহস কি শুধু তিনজনের বেপরোয়া উদ্যোগ? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে একটি বৃহত্তর অপরাধের জাল? সমাজে চিকিৎসকের নাম মানে বিশ্বাস, ভরসা। সেই নামকে ঢাল করে এমন নোংরা কারবারের স্পর্ধা কোথা থেকে আসে? উড়িষ্যা থেকে মুর্শিদাবাদ—এত দীর্ঘ পথে এমন বিপুল পরিমাণ মাদক নিয়ে যাওয়ার নির্লজ্জ আত্মবিশ্বাস কীভাবে সম্ভব? এই প্রশ্নগুলো শুধু তদন্তের বিষয় নয়, এটি আমাদের সকলের মনে ঝড় তুলছে।এই তিনজন—চালক, মালিক, ব্যবসায়ী—তাদের এই বেপরোয়া মানসিকতা কি আমাদের সমাজের কোনো ফাটলের সুযোগ নিচ্ছে? চিকিৎসকের নামে ছদ্মবেশ ধরে এমন কাজ করার নির্লজ্জতা কোথা থেকে আসে? এটা কি শুধু তিনজনের দুঃসাহস, নাকি এর পেছনে রয়েছে আরও গভীর কোনো সংঘবদ্ধ শক্তি? পুলিশের জালে ধরা পড়লেও, এই ঘটনা একটি বিষাক্ত সত্য আমাদের সামনে তুলে ধরে—অপরাধের এই নির্ভীক রূপ সমাজের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি।পুলিশের এই অভিযান নিঃসন্দেহে একটি বিজয়। তাদের তৎপরতা এবং গোপন সংবাদের সঠিক ব্যবহার একটি বড় অপরাধকে থামিয়েছে। কিন্তু এই বিজয়ের পাশে একটি কটাক্ষ না করে পারা যায় না—এই অপরাধীরা এত নির্ভয়ে এমন কাজ করার সাহস কোথায় পায়? এই দুঃসাহস কি শুধু ব্যক্তিগত বেপরোয়াপনা, নাকি সমাজের কোথাও লুকিয়ে থাকা দুর্বলতার প্রতিফলন? পুলিশের তদন্ত এখন এই প্রশ্নের গভীরে যেতে হবে।আজ আদালতে এই তিনজনকে হাজির করা হয়েছে। পুলিশের দশ দিনের হেফাজতের আবেদন কি এই মাদক পাচারের গভীর জাল উন্মোচন করবে? নাকি এটি কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে থেকে যাবে? এই ঘটনা আমাদের সামনে একটি অস্বস্তিকর প্রশ্ন তুলেছে—আমাদের সমাজ কি এমন নির্লজ্জ অপরাধের মোকাবিলায় প্রস্তুত? চিকিৎসকের নামে ছদ্মবেশে মাদক পাচারের এই ঘটনা শুধু পুলিশের তদন্তের বিষয় নয়, এটি আমাদের সকলের জন্য একটি জাগরণের ডাক। এই দুঃসাহসী অপরাধীদের নির্ভীক সচ্ছলতা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে, আর এই ভাবনা থেকেই উঠে আসছে একটি কঠিন প্রশ্ন—আমরা কি এই বিষাক্ত অপরাধের জাল থেকে আমাদের সমাজকে মুক্ত করতে পারব?

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )