
সীমানার ঊর্দ্ধে: পূর্ব রেলের ক্রীড়া একাডেমিগুলি আগামী প্রজন্মের ক্রীড়া তারকাদের গড়ে তুলছে
Kolkata, July 8, 2025 :
যাত্রী পরিবহনের জন্য পরিচিত পূর্ব রেল এখন পূর্ব ভারতের একটি প্রধান মালবাহী পরিবহন সংস্থা হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছে। পরিবহন খাতে প্রধান ভূমিকা পালন করলেও, পূর্বরেল ক্রীড়া চর্চার প্রসার ও ক্রীড়া অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সর্বতোভাবে উদ্যোগী হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের গড়ে তোলা যায় এবং একটি ক্রীড়ামুখী সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।
তিন বছর আগে, বিশ্ব ছিল শতাব্দীর অন্যতম বড় ধাক্কা—COVID মহামারীর প্রভাব থেকে সেরে ওঠার পথে। মানুষ তখন নতুন করে জীবনধারার উপর গুরুত্ব দিতে শুরু করে—প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর জোর দিয়ে শারীরিক কসরতের গুরুত্ব উপলব্ধি করে। সেই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পূর্ব রেল এক অভিনব উদ্যোগ নেয়, যাতে কিশোর-যুবাদের মধ্যে ক্রীড়াভ্যাস গড়ে তোলা যায়। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে, বেহালা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে একটি ক্রিকেট একাডেমির উদ্বোধনের মাধ্যমে এই প্রয়াস শুরু হয়।
এই উদ্যোগটি ভারতীয় রেলের দীর্ঘদিনের ক্রীড়া অনুরাগের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্বারা ঘোষিত “খেলো ইন্ডিয়া, খেলো” কর্মসূচির বাস্তব রূপায়ণ। লাভের লক্ষ্য নয়, বরং বাজারের তুলনায় অনেক কম ফি ধার্য করা হয় এবং রেল কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য অতিরিক্ত ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়। দক্ষ প্রশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে এই একাডেমি প্রতিভাবান কিশোরদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। স্থানীয় মানুষের সাড়া এতটাই ব্যাপক হয় যে অল্প সময়েই একাডেমির আসন পূর্ণ হয়ে যায়।

“উৎকৃষ্টতা”কে মূলমন্ত্র করে শুরু হওয়া এই প্রচেষ্টা দ্রুত ফল দিতে শুরু করে—
• ওয়াজেদ হোসেন অনূর্ধ্ব ১৯ বাংলা দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন।
• শুভঙ্কর দে বেঙ্গল প্রিমিয়ার লিগে কলকাতা টাইগার্স দলের হয়ে খেলেন।
• একাডেমির অনূর্ধ্ব ১৫ দল সি.এ.বি টুর্নামেন্টে শীর্ষ স্থান অর্জন করে।
এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে, পূর্ব রেল দ্রুত তার ক্রীড়া কার্যক্রম সম্প্রসারিত করে। শীর্ষ মানের পরিকাঠামো ও প্রচুর ক্রীড়া সম্ভাবনার ভিত্তিতে বাস্কেটবল ও সাঁতার একাডেমি চালু করা হয়। তাঁদের সাফল্য নিম্নরূপ—
• সানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় টানা তিন বছর ধরে ঝাড়খণ্ড রাজ্য টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে শীর্ষস্থান ধরে রাখেন।
• সোহম বসু রায় পূর্বাঞ্চল সি.বি.এস.ই টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।
• বাস্কেটবলে, সমায়েত্রী সাহা, ঐশী পাত্র ও অয়ন দে জাতীয় পর্যায়ে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেন।
ঘোলসাপুর স্পোর্টস কমপ্লেক্সের সাঁতার ও ডাইভিং একাডেমিতে রয়েছে বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা। ডাইভার শুভম হোড় ও অভ্র সরদার ইতিমধ্যে জাতীয় প্রতিযোগিতায় রূপো জিতেছেন।
সবচেয়ে সাম্প্রতিক সংযোজন হলো ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে চালু হওয়া ‘লক্ষ্য’ দাবা একাডেমি, যেখানে গ্র্যান্ডমাস্টার সহ অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত প্রশিক্ষণ চলছে। শুরু থেকেই এটি একটি শ্রেষ্ঠতা কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত।
পূর্ব রেলের ক্রীড়া একাডেমিগুলিকে অনন্য করে তুলেছে তাদের নিখুঁত তত্ত্বাবধান, ব্যক্তিগত মনোযোগ, খেলাভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন, কঠোর অনুশীলন, নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণ এবং তুলনাহীন পরিকাঠামোর সমন্বয়।

এই একাডেমিগুলির সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হল যুব সমাজের মধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা। সংখ্যা কখনোই পূর্ব রেলের উদ্দেশ্য ছিল না, তবুও ৭০০-র বেশি প্রশিক্ষণার্থীর উপস্থিতি এই একাডেমিগুলির জনপ্রিয়তা, আস্থা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে অল্প সময়ের মধ্যেই অর্জিত বিশ্বাসের জ্বলন্ত প্রমাণ।