
শ্রাবন মাসের শেষ সোমবার উপলক্ষে ভক্তের ঢল বাবা কুমুদেশ্বর শিব মন্দিরে
রিমা ঘোষ, আমতা, হাওড়া:-
শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার শিব ভক্তদের কাঁধে গঙ্গাজলের বাঁক নিয়ে মহাদেবের জয়ধ্বনি দিতে দিতে রাস্তা ধরে ছুটে যেতে দেখা যায়। কেউ যায় তারকেশ্বর, কেউবা পাড়ার জনপ্রিয় কোনো শিব মন্দিরে। সবার লক্ষ্য শিবের মাথায় জল ঢেলে পূণ্যার্জন করা। এর পেছনে আছে অনেক জনশ্রুতি ও পৌরাণিক কাহিনী।
কথিত আছে শ্রাবণ মাস শিবের মাথায় জল ঢালার মাস, অতি পবিত্র মাস। পুরাণ মতে এই মাসেই সমুদ্রমন্থন হয়েছিল ও দেবাদিদেব মহাদেব, মন্থনে উঠে আসা কালকূট বিষ পান করেন। বিষের প্রভাব কম করার জন্য ভক্তরা এই মাসে বিশেষ করে মহাদেবকে গঙ্গাজল অর্পণ করেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, শিবের মাথায় স্বয়ং মা গঙ্গার অবস্থান, তবে আর গঙ্গাজল ঢালার কি দরকার? এর উত্তর এই যে, ভক্তের হাতের মধুর ছোঁয়াটুকু প্রভুর একান্তই পছন্দ, তাই ভক্তের আনা গঙ্গাজলে যে এই সুমধুর ছোঁয়াটুকু থাকে, তাতেই তিনি পরম তৃপ্তি লাভ করেন। ভক্তগণ শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার নিকটস্থ শিবমন্দিরে, অভাবে বাড়িতেই, শিবলিঙ্গে গঙ্গাজল ও একটি বেলপাতা অর্পণ করে পরম শান্তি লাভ করেন। কৃপাময় মহেশ্বর কাকে কিভাবে কৃপা করেন, বোঝা খুব মুশকিল; তবে যাকে তিনি কৃপা করেন তার জীবন ধন্য হয়ে যায়। ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিলাভই মানবজীবনের উদ্দেশ্য হোক।

এদিকে রাজ্যের অন্যতম হাওড়া জেলার আমতা গ্রামের কুমুদেশ্বর শিবমন্দির।সারা বছরই এই মন্দিরে শিব ভক্তদের আনাগোনা লেগেই থাকে। বিশেষ করে শিব পুজোর বিশেষ দিন গুলিতে ভক্তদের বেশিমাত্রায় ভিড় লক্ষ্য করা যায়। শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দির কিংবদন্তি অনুসারে, কোনও একজন রাখাল মাঠে গরু চড়াতে এসে এই শিবলিঙ্গ উদ্ধার করে তারপর সেটিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৈরি করা হয় মন্দির।মন্দিরটি ধীরে ধীরে একটি পবিত্র স্থান হিসাবে গুরুত্ব লাভ করে এবং আজও এটি একটি বিখ্যাত শিবমন্দির। মন্দিরটি শিবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত এবং এখানে বাবা শিবকে কুমুদেশ্বর রূপে পূজা করা হয়। প্রতি বছর বহু তীর্থযাত্রী এই মন্দির পরিদর্শনে আসেন। ভক্তদের বিশ্বাস বাবা কুমুদেশ্বর তাদের বিপদ থেকে রক্ষা করবেন।
মন্দির কমিটির এক সদস্য জানান মন্দিরে প্রত্যেক সোমবার ভীড় হয় আজ শেষ সোমবার হবার কারণে ভক্তরা উলুবেরিয়া গিয়ে সেখান থেকে গঙ্গা নদী থেকে জল এনে ভগবান শিবের মাথায় অর্পণ করে। কেউ কেউ আবার দামোদর নদ থেকে জল এনে ভগবান শিবের মাথায় জল অর্পণ করছে।
এই মন্দিরে সকালে জুড়ি ভোগের (পায়েস) ব্যাবস্থা করা হয়েছে তাছাড়া সন্ধ্যায় খিচুরি ভোগ এবং জাগরণের ব্যাবস্থা করা হয়েছে শ্রদ্ধালুদের জন্য।
ভক্তদের কোন অসুবিধার সম্মুখীন না হয় তা নজরে রাখছে স্থানীয়রা।
