দুর্গোৎসবের আনন্দে মানবতার স্পর্শ: জামুড়িয়া নামোপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আসানসোলের বিবি কলেজের অভিনব উদ্যোগ

দুর্গোৎসবের আনন্দে মানবতার স্পর্শ: জামুড়িয়া নামোপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আসানসোলের বিবি কলেজের অভিনব উদ্যোগ

সংবাদদাতা: জামুড়িয়া:- গতকাল ছিল শুভ মহালয়া। পিতৃপক্ষের শেষ ও দেবীপক্ষের সূচনা। গতকাল থেকেই বেশ কিছু দুর্গা উৎসব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে উদ্বোধন হয়েছে এক্ষেত্রে বাদ থাকেনি আসানসোল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলও। পূজার আনন্দে মানুষ আত্মহারা। কিন্তু কোথাও এই আনন্দে ভাটা পড়ে যায় যখন দেখা যায় ছোট ছোট শিশুরা তাদের পারিবারিক আর্থিক প্রতিকূলতার কারণে পুজোতে নিজের একখানি নতুন বস্ত্র কিনতে পারেনি। তাই এই বাস্তব সমস্যার সমাধানের জন্য এক অভিনব উদ্যোগ নিতে দেখা গেল জামুড়িয়া নামোপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়কে। যেটি সম্ভব হয়েছে আসানসোল বনোয়ারীলাল ভালোটিয়া কলেজের বাণিজ্য বিভাগের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। 

এই উদ্যোগটির আসল আকর্ষণ হল এখানে আর্থিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া বিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বস্ত্র তুলে দিচ্ছে আর্থিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই। অবশ্যই এক্ষেত্রে কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বিবি কলেজের বেশ কিছু অধ্যাপকের সক্রিয় সহযোগিতাও রয়েছে। এমন উদ্যোগের কারণ কী এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপ নারায়ণ নায়ককে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মানবতা বোধ, সমাজসেবী মনোভাব, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা গড়ে তোলার জন্য এই উদ্যোগ। তিনি জানান এর আগেও বিবি কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা বিশেষত  বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে এসে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে শিক্ষা সামগ্রী তুলে দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এখানে কলেজের ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের টিফিন খরচ বাঁচিয়ে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের কখনো শিক্ষা সামগ্রী কখনো পূজায় নতুন বস্ত্র তুলে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। তিনি আরো জানান ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার হলিস্টিক ডেভেলপমেন্টের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন। এই জাতীয় কর্মকাণ্ড ছাত্র-ছাত্রীদের হলিস্টিক ডেভলপমেন্টের সহায়ক হবে বলে তিনি জানান। জামুড়িয়া নামোপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, বি বি কলেজ আসানসোল ও কমার্স ডিপার্টমেন্ট একসঙ্গে মিলে এই পরিকল্পনা করেছিলেন যেখানে কলেজ ছাত্রছাত্রীরা স্কুল ছাত্র ছাত্রীদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসবে। আগামী দিনে শুধুমাত্র শিক্ষা সামগ্রী নয় তারা পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের সময়সীমার বাইরে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তাদের শিক্ষার মান উন্নয়নকে আরো উন্নত করবে বলে তিনি জানান। একইসঙ্গে তিনি বিবি কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর অমিতাভ বাসু ও বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক ডঃ অমলেন্দু সামন্ত, ডক্টর শান্তনু মল্লিক, বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র ছাত্রী সুজল কেসরী, খুশি কেসরি, রিষি বিশ্বকর্মা, বিদ্যা বর্ণয়াল, গুনগুন বর্ণয়াল, সুরিয়া প্রতাপ সিং কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ছাড়াও তিনি বিদ্যালয়ের সহশিক্ষক শুভদীপ সরকার, জ্যোতিষ রুইদাস, বলরাম দে, মাধবী মিস্ত্রি, অভিভাবক বৃন্দ ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ যারা আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

আজকের অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় একশতর কাছাকাছি ছাত্র-ছাত্রীর হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানটি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি শ্রী রথীন্দ্রনাথ মজুমদার মহাশয়, বিবি কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর অমিতাভ বাসু মহাশয় ও বাণিজ্য বিভাগের সহ অধ্যাপক ডক্টর শান্তনু মল্লিক। এ দিনের অনুষ্ঠান সম্পর্কে সংসদের সভাপতি শ্রী রথীন্দ্রনাথ মজুমদার জানান জানান বিদ্যালয়ের এই জাতীয় উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। একইসঙ্গে তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপ নারায়ণ নায়ককে এমন এক অভিনব উদ্যোগের জন্য অভিনন্দন জানান। বিবি কলেজের মাননীয় অধ্যক্ষ শ্রী অমিতাভ  বাসু মহাশয় জানান আমরা এই জাতীয় আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে সত্যিই ভালো লাগছে। বি বি কলেজ আগামী দিনেও এভাবেই বিদ্যালয়ের পাশে থাকবে একই সঙ্গে তিনি প্রধান শিক্ষকের ভুয়সি প্রশংসাও করেন। বিবি কলেজের উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীগণ জানান আজকে এই অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পেরে সত্যিই ভালো লাগছে। বিদ্যালয়ের ও ছাত্র ছাত্রীদের আপ্যায়নে আমরা মুগ্ধ। বিদ্যালয়ের এক আদিবাসী প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী ঈশিকা কোড়া জানায় এবছর এটাই তার পুজোর প্রথম জামা। সে আরো জানায় এতদিন ভাবতাম আর কদিন পরে আসছে দুর্গাপুজো কিন্তু আজ এই জামাটি হাতে পেয়ে মনে হচ্ছে আর কদিন পরে আমার দুর্গাপূজা আসছে। জামুড়িয়া একচক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শ্রী অরিজিৎ মন্ডল এমন মহতি উদ্যোগের জন্য বিদ্যালয়কে সাধুবাদ জানান। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য বিদ্যালয়ের অবশিষ্ট চতুর্থ পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে আগামী ২৬ শে অক্টোবর নতুন পোশাক তুলে দেওয়া হবে। যা ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেবেন মিশন উড়ান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন রানিগঞ্জ। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তার জন্য অগ্রিমভাবে মিশন উড়ান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট কঙ্কনা সিনহা সহ সকল মেম্বারদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )