কোজাগরী

অদিতি চক্রবর্তী (চিত্তরঞ্জন)

​কোজাগরী পূর্ণিমার রাত। মফস্বলের বাড়িটার উঠোন জুড়ে তখন সদ্য আঁকা আলপনার স্নিগ্ধ গন্ধ। শিউলি ফুল ঝরে গেছে, কিন্তু তার সুবাস যেন এখনও হেমন্তের বাতাসে লেগে আছে। আকাশ এত পরিষ্কার যে চাঁদটাকে মনে হচ্ছে কেউ যেন যত্ন করে ধুয়ে টাঙিয়ে দিয়েছে।

​ঘরের দাওয়ায় সব আয়োজন সম্পূর্ণ। মা কড়কড়ে নতুন শাড়ি পরে তুলোর সলতে দিয়ে পঞ্চপ্রদীপ জ্বালাচ্ছেন। মাটির লক্ষ্মীর সরা, ধানের শিষ, লক্ষ্মীর ঝাঁপি আর একমুঠো কড়ি—সবকিছুই সাজানো হয়েছে গভীর মনোযোগে। এগুলি শুধু উপাচার নয়, এ যেন কৃষিনির্ভর একটি জীবনযাত্রার সরল প্রতিচ্ছবি।
​ছোট্ট সুমি তার ঠাকুমার পাশে চুপ করে বসে সব দেখছিল। তার চোখে বিস্ময়। সে চুপিচুপি ঠাকুমাকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা ঠাকুমা, আমরা লক্ষ্মী পুজো করি কেন? অনেক বড়লোক হব বলে?”

   ​ঠাকুমা হাসলেন। সেই হাসিটা পূর্ণিমার চাঁদের মতোই শান্ত আর শীতল। তিনি সুমির মাথায় হাত রেখে বললেন, "লক্ষ্মী মানে শুধু সোনা-রূপা নয় রে, মা। এই যে দেখছিস ঘরে সকলের মুখে হাসি, রাতে দু’মুঠো গরম ভাত, ভাইবোনেদের মধ্যে ভালোবাসা, বাবার ভালো শরীর—এসবও তো লক্ষ্মীরই আশীর্বাদ। কোজাগরী রাতে মা এসে দেখেন, কে জেগে আছে; আর সেই জেগে থাকাটা শুধু ধন পাওয়ার জন্য নয়, জেগে থাকাটা হলো মন দিয়ে সংসারকে ভালোবাসার জন্য। আমরা পুজো করি যেন এই বাড়ির অন্ন, শান্তি আর আনন্দ অক্ষয় থাকে।"

  ​এরপর যখন শঙ্খধ্বনিতে চারপাশ ভরে গেল, সুমি দেখল—মায়ের হাতে থাকা কুলোর জলে পূর্ণিমার চাঁদটা থরথর করে কাঁপছে। সেই চাঁদের আলোয় সারা বাড়ি যেন এক নির্মল ভালোবাসার ঐশ্বর্যে ভরে উঠল। সুমি বুঝল, তাদের ঘরে আজ শুধু ধনদেবী আসেননি, এসেছেন সুখ আর সমৃদ্ধির দেবী। এই জেগে থাকা রাতটি কেবল একটি তিথি নয়, এটি আগামী এক বছরের জন্য মঙ্গলকামনা।
CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )