আমার প্রিয়বেলার মানুষ

শুক্লা সরকার (রাজারহাট, কলকাতা)

“ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে
ঠেকাই মাথা “……………………
চেনা সুরের মায়ায় পাশে থাকা মোবাইলটা
হাতে নিতেই নামটা চোখে পড়লো,
হ্যালো,মাসীমনি,বলো কেমন আছো?
মেসোমনির শরীর কি খারাপ হলো ?
দাঁড়া, দাঁড়া,সব বলবোরে মা, বলছি।
আগের মতো এতো কি আর শক্তি আছে!
থেমে থেমে বলছি, সব বলবো তোকে।
সেই একই রকম আছি। ভালো আর
থাকি কি করে মারে, বয়স হয়েছে তো!
তোরা কেমন আছিস সোনা মাগো?
আমরা ভালো আছি গো মাসীমণি।
আমাদের যে ভালো থাকতেই হবে।
কত কাজ, কত দায়িত্ব বলোতো!
কাজের দায়িত্ব যেন শেষই হয় না।
মেসোমনি কেমন আছে স্ট্রোকের পর।
সেই থোর বড়ি খাড়া,খাড়া বড়ি থোর।
বিছানায় শুয়ে,কোথায় গেলে গো!
এক পাও নড়তে দেয়না কাছ থেকে।
তুই তো আমার সবই জানিস মা রে,
আমাদের যে দেখার কেউ নেই।
তবুও মেয়েটা ভালো, বড্ড বিশ্বাসী
আয়া হলেও,মায়া আছে,মমতা আছে
ও ই দেখে তোর মেসোকে, আমাকে।
আমি এখন কারোর জন্য কিছুই যে
করতে পারিনা সোনামা,আমার বকুল।
সেই মাসীমণি,গার্লস স্কুলের দিদিমনি।
অঙ্কের দিদিমনি,এখনকার অঙ্ক ম্যাম।
যাকে বলে কড়া আর খুঁতখুঁতে টিচার।
একটি ছেলে,মানুষ হওয়ার পর পরপরই
আমেরিকা প্রবাসী,বাবা মাকে দেখার
সময় কোথায় হাতে,যে দেখবে তাদের!
আমাদের দেখার কেউ নেই রে মামনি!
আজকাল দেখার কেউ থাকেনা গো,মাসীমণি!
সবাই ব্যস্ত কাজে, মনে, প্রাণে, হৃদয়ে।
এভাবেই ভালো থেকো মাসীমণি তোমরা
আমরাও এক পা এক পা করে প্রতিদিন
এগিয়ে যাবো ঠিক তোমাদের মতোই।
তারপর বিছানা হবে, স্কুল,বাড়ি,আশ্রয়
এভাবেই চলছে জীবন চলুক স্রোতে।
এভাবেই ভালো থাকি আমরা সবাই
দেশ থাকুক,দেশের মতো,মাটির টানে
আমরা যারা একলা ঘরে ফিরবো জানি,
রবি ঠাকুরের সেই তো গানে,সেই কবিতা,
গেয়ে উঠি মনে মনে,”ও আমার দেশের
মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা”।
যাবো তোমাদের দেখতে,আমার পৃথিবী
আমার সেই ছোটোবেলার জগতটাকে
আর একবার দেখতে যাবো মাসীমণি।
বেশ আসিস,দুচোখ ভরে দেখবো তোকে।
অনেক ভালোবাসা নিস সোনামা আমার!
প্রণাম নিও মাসীমণি তোমরাও আমার।
এটুকুই শুধু দিতে পারি আমার প্রিয় মানুষ,
আমার ছোটবেলা, আমার ছাত্রিবেলাকে।

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )