স্মৃতির পাতায় —

লিপিমিতা তনুশ্রী (কলকাতা)

ঝরঝর মুখর বাদলদিনে…. মুহূর্তদের ঝলকানি

কতই বা বয়স তখন… বাইরে থেকে ভেসে আসছে — “আজি ঝরঝর মুখর বাদলদিনে…জানি নে, জানি নে… ” কখনো বা শোনা যায় তারুণ্য উচ্ছ্বাসে — ” এমন দিনে তারে বলা যায়…এমন ঘনঘোর বরিষায়…।”

লাইব্রেরিতে মাত্র গুটিকয়েক জন, বর্ষ শেষের পথে। কখনো বা অচলা-বিমলা, কখনো বা ছন্দ অলংকারে কিভাবে সাজানো যায় বর্ণগুলোকে তার হাতেখড়ি চলে। মাঝে মাঝে বেশ তর্ক হতো —কখনো বা ছাপিয়ে যেত যৌবনদীপ্ত পুরুষ স্বর আবার কখনো বা সে কণ্ঠস্বর অবদমিত করে সোচ্চারিত হত প্রতিবাদী নারী কণ্ঠ! কে দোষী, কার অন্যায়— বিমলা-সন্দীপ না নিখিলেশ? না, না অচলাই বা নামের গরিমা, মানে (হেসে হেসে) মহিমা বজায় রেখে মহিমের প্রতি একান্ত একক অনন্য হয়ে চিরঅনুরক্ত থাকল না কেন? সুরেশের বা এমন কি দোষ ছিল? এইসব নিয়ে তর্ক যখন তুঙ্গে, তখন তা হালকা করার জন্য প্রসঙ্গ পালটে কেউ কেউ রাধা-কৃষ্ণের ঐশ্বরিক লীলাকে উপস্থাপন করত — ভাব, অনুরাগ, পূর্বরাগ, এমনকি শেষে (নিজেদের অপ্রাপ্তিতে) আক্ষেপানুরাগও চলত, তা তখন পদাবলী অতিক্রম করে পদে পদে যাতনাদায়ক মর্মবিদারক। ফিলজফি, সাইকোলজির (দর্শন / মনস্তত্ত্ববিদ্যা) অতটা গভীর জ্ঞান তখনও হয়নি, লজিক নিয়েই নাড়াচাড়াটা একটু বেশি হত, ওতে নম্বর বেশি… যুক্তিযুক্তভাবে এসব সমস্যার সমাধান, ওরে বাবা, বেশ কষ্টসাধ্য, তাও শেষ অবধি হয়তো কোনও যুক্তিই টিঁকবে না, থই পাবে না, সত্যি তো জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি একেকজনের কাছে একেকরকম, স্বমতে যে যার মতো ঠিকবেঠিক! কোথায় তল পাওয়া যাবে— অতল, না রসাতল, কে জানে…. এত তলিয়ে ভাবনা বোধহয় এইপ্রথম শুরু হলো…! অন্য কিছু না হোক নম্বরের দৌড়ে তো একটু ভাবতেই হয়

সময় হলো যাবার এবার। কেউ পড়ছে — রবীন্দ্রনাথ, কেউ বা আধুনিক, আবার কেউ ডুবেছে রাধা-কৃষ্ণে — ভাব-বৃন্দাবনে… চন্ডীদাস-জয়দেব-বিদ্যাপতি। আমি তখন “রক্তকরবীর” ত্রয়ী প্রেমে, রূপক সাংকেতিক ভাবসায়রে অনুধাবন প্রয়াস,
যেন কোন দূর দূরান্ত থেকে ভেসে আসছে সেই চিরন্তন মধুর সঙ্গীতধারা…ক্রমশ একের পর এক সি্ঁড়ির ধাপ পেরিয়ে অবগাহিত হচ্ছি, সিক্ত হচ্ছি সে ধারায়। তনুমনের চঞ্চলতা, বিহ্বলতা সদ্য যৌবনানুরাগ কখন যে শান্ত স্থিতধী হয়ে মিশে যায় সেই সুরে, যখন “অকূল রোদন উঠে দুলে…জলে -স্থলে বাজায় বাঁশি…”! কখনো বা বিশু, কখনো বা রঞ্জন-নন্দিনী! রাজা— অর্থ-দম্ভ-মোহে সেই বা কি বলতে চায় আড়ালে-আবডালে, রাজসিক ঐশ্বর্য ধনবিলাসে কিনতে চায় মানুষের জীবন — মনুষ্যত্ব, পবিত্র প্রেমকে?
সমাজে এখনও এমন বহু বিচিত্র বীর্যবানদের দেখা যায়, মাঝে মাঝে তাই ভাবি জগতে এত চরিত্র গঠনকারী গ্রন্থ সমাবেশ, নিয়ম-নীতির হাতেখড়ি সেই কোন ছোটবেলা থেকে শুরু হয়, তবুও কিছু মানুষ (যথেষ্ট শিক্ষিত সুপুরুষ বলে নিজেদের দাবি করে) কেন এত অমানুষ হয়!!

নাহ্ ফিরে যাই…!!!

মাঝে মাঝে কলমটা হাতে নিয়ে কোথাও যেন তলিয়ে যাই, ওই যে দূর থেকে দেখছে যারা আমাকে, মাঝে মাঝে আড়চোখে — তাদের চোখের ভাষা, নির্বাক মুখালাপ, বুঝতে কি পারি আমি যথার্থই! না, কোনো প্রত্যুত্তর নয়, নিরুত্তর — এ আমার সলজ্জ বিনম্র পরিচয়

CATEGORIES

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )