নারী জনম
সোমা নায়ক (কলকাতা)

ও মাগো মা! অমুকের বউ? তোমার এমন সাজের ছিরি?
শাঁখা সিঁদুর কিচ্ছুটি নেই! কেমন দেখতে! কি বিচ্ছিরি!
এমনটা তো ছিলে না আগে! মুখশ্রীও লক্ষী পানা
হঠাৎ এমন হলোটা কী? কে করলো থাকতে মানা?
কী…কী বললে? কেউ বলেনি? সখ হয়েছে? নিজের খুশি?
মরণ! বলি মেয়ে মানুষের ইচ্ছে কী গো? কচি খুকি! আলটুসি!
হেসে খেলে দিব্যি ছিলে। বর সোহাগী। মানত্, উপোস
পাড়া পড়শী, সবাই বলি- বউয়ের ভাগ্যে স্বামীর যশ।
আমিও আমার বউকে ডেকে বেশ কয়েকবার শুধিয়েছিলাম
দেখো গে যাও, অমুকের বউ। কেমন লক্ষ্মীমন্ত, ঐন্দ্রিলা।
সেই বউ আজ ঘোমটা ফেলে, বদলে শাড়ি আধুনিকা!
এয়োস্ত্রীর নিশানা নেই! কি পোশাকে শরীর ঢাকা!
নেশার ঘোরে বর পেটাত? বাপ মা তুলে গালি গালাজ!
তাই বলে সব ধুয়ে মুছে বদলে ফেলবে বউয়ের সাজ!
দেখে শুনে রা না কেটে শাশুড়ি মাও চুপ থাকত!
মিথ্যে হাসি, কথার আড়ে রাত্রি কালীন গল্প ঢাকত?
সে বেচারি করবেটা কী? মায়ের মন, পেটের ছেলে
মানতে হয়তো বাধ্য হচ্ছে। নাড়ির টান! দেবে কি ফেলে?
এখন তোমার চলছে কেমন? সেই তো থাকছো স্বামীর ঘরে।
দেমাক দিয়ে কি লাভ হলো? তার চেয়ে ভালো যেতে মরে।
সমাজটা তো বেঁচে যেত। এসব দেখার পাপ হত না
মেয়ে মানুষের সোয়ামী নিন্দে! সইবে বলো, এই যাতনা?
হাসপাতালে আয়ার কাজে নিজের খরচ নিজেই চালাও!
এমন স্বামীর ঘর চাই না, তাই এদের থেকে দূরে পালাও?
বাচ্চা কোলে নিতে গেলে শাঁখা, চুড়ি গায়ে লাগে
দেখে শুনে সোয়ামী তোমায় পিটিয়ে ছিল ভীষণ রাগে।
বলেছিলে, সইবে না আর নিত্যদিনের এই ব্যবহার?
বন্ধ ঘরে আটকে তোমায় দেয়নি একটু জল বা খাবার।
এ..এইটা ভীষণ বাড়াবাড়ি। টিকবে কে এই অত্যাচারে!
অমুক ছেলে এমন মানুষ! যায় না বোঝা ব্যবহারে।
কত ঘরে এমন কত ঘটনা যে রোজ পড়ছে ঢাকা
কত মেয়ের কপাল পুড়ছে। দেখতে ভরাট। আসলে ফাঁকা।
হায় রে আমার নারী জনম, আরও কী দেখতে, শুনতে হবে
জীবনের চেয়ে শাঁখা সিঁদুর এমন দামী হলো কবে?
বেশ করেছ ধন্যি মেয়ে, নিজেই নিজের ঢাল হয়েছ
এতোদিন তো কিছু না বলে চুপচাপ সব সয়েই গেছ।
এবার রুখে দাঁড়াও দেখি। দাও ভেঙে ওই বিষ দাঁত যত
খোলা আকাশ, মুক্ত বাতাস, বাঁচো, নিজেই নিজের মতো।

